প্রতিবার যখন স্ফটিকটি আবির্ভুত হয়েছে, এর রক্ষকেরা সর্বদা একে সেই সব লোকেদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য তৈরি থেকেছেন যারা এটিকে স্বার্থপরের মতো ব্যবহার করবে। এই সব রক্ষকদের পরিচয় কোনদিন বদলায়নি এবং তারা সমকালীন জগৎ বা সময় নির্বিশেষে একইরকম প্রাবল্যের সঙ্গে এটিকে ভালবেসে এসেছেন।
বহু প্রাচীন এই রক্ষকদের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে এক মেয়ে, যে এদের বড়ই স্নেহের। মেয়েটির নিজের মধ্যেই এই স্ফটিকের নিজস্ব শক্তি নিহিত আছে। সেটাই স্ফটিকের ধারক ও শক্তির উৎস। এই দুইয়ের মধ্যেকার রেখাটি অনেক সময় ঝাপসা হয়ে যায়, এবং স্ফটিকটিকে রক্ষা করার কাজটি ক্রমপর্যায়ে অন্য রক্ষকদের হাত থেকে এই ঋত্বিকাকে রক্ষা করায় বদলে যায়।
এই সেই সুরা যা অন্ধকারের অন্তরের পানীয়। এটি স্ফটিকের রক্ষকদের দুর্বল করে দেবার ও আক্রমণের অবস্থায় নিয়ে আসার সুযোগ। অন্ধকার এই শক্তির কামনা করে এবং সেই সঙ্গে সেই মেয়েরও কামনা করে ঠিক যেমনভাবে কোন পুরুষ কোন নারীর করে থাকে।
এই মাত্রা ও বাস্তবতাগুলির প্রতিটির মধ্যেই তুমি একটি গোপন উদ্যানের সন্ধান পেতে পারো যা সময়ের অন্তর (Heart of Time) নামে পরিচিত। সেখানে হাঁটু মুড়ে বসা এক কমবয়সী ঋত্বিকার প্রতিমা দেখতে পাওয়া যাবে। তাকে ঘিরে রয়েছে শতাব্দী-প্রাচীন এক যাদুবিদ্যা যা তার গোপন সম্পদকে লুকিয়ে এবং অত্যন্ত যত্নে সংরক্ষিত রাখে। কুমারী প্রতিমার দুই বাহু প্রসারিত, যেন অত্যন্ত মূল্যবান কোন কিছু তার হাতে এসে ধরা দেবার অপেক্ষায় সে রয়েছে।
কিংবদন্তি আছে, সে আসলে সেই শক্তিশালী পাথরটি তার হাতে ফিরে আসার অপেক্ষায় রয়েছে যার নাম রক্ষকের অন্তর-স্ফটিক (Guradian Heart Crystal)।
এই প্রতিমার আসল রহস্য ও কীভাবে এর সৃষ্টি হয়েছিল তা শুধু রক্ষকেরাই জানেন। পাঁচ ভাইয়ের জন্মের আগেই তাদের পূর্বপুরুষ, তাদামিচি ও তার যমজ ভাই হায়াকুহেই, এই সময়ের অন্তরকে তার অন্ধকারতম ইতিহাসকালে রক্ষার কাজ করছিল। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এই যমজ ভাই সেই বিভেদপ্রাচীরকে রক্ষা করে এসেছে যা মানবজাতিকে দৈত্যদের দুনিয়ায় পদার্পণ করা থেকে আটকায়। কাজটি ছিল খুব পবিত্র এবং মানবজাতি ও দৈত্যদেরকে একে-অপরের থেকে বাঁচিয়ে ও আড়াল করে রাখার জন্য তার দরকার ছিল।
তাদের রাজত্বকালে, অপ্রত্যাশিতভাবে, এই পবিত্র স্ফটিকের কারণে কতিপয় মানব দুর্ঘটনাবশত ওই বিভেদপ্রাচীর গলে দৈত্যদের রাজ্যে গিয়ে উপস্থিত হয়। কোন এক বিশৃঙ্খলার সময় এই স্ফটিকের শক্তি ওই বিভেদপ্রাচীরে চিড় ধরায় যা এই দুই জগৎকে আলাদা করে রাখত। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই মানবজাতির নেতা ও তাদামিচি নিজেদের মধ্যে মৈত্রী স্থাপন করে এবং বিভেদপ্রাচীরের ওই ফাঁক বুজিয়ে দিয়ে আবার এই দুই জগৎকে একে-অপরের থেকে চিরতরে আলাদা করে রাখার চুক্তিতে আবদ্ধ হয়।
কিন্তু ওই সময়েই হায়াকুহেই ও তাদামিটি উভয়েই ওই মানবজাতির নেতার মেয়ের প্রেমে পড়ে যায়।
হায়াকুহেইয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই তাদামিচি ও মেয়েটির বাবা মিলে ওই ফাটল বুজিয়ে দেয়। বিপজ্জনক ত্রিকোণ প্রেমকে চিরকালের জন্য বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে ওই বিভেদপ্রাচীরের জোর আরও দশগুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে হায়াকুহেইর হৃদয় খান-খান হয়ে যায়... তার নিজের ভাই, তাদামিচি, কিনা তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে তাকে ও তার প্রিয় ঋত্বিকাকে চিরতরে আলাদা করে রাখার বন্দোবস্ত নিশ্চিত করে দিল!
ভালবাসা শুধু ভালবাসার মানুষ তৈরি করে না, হারানো ভালবাসা ভয়ংকর অপরাধী তৈরি করতে পারে। হায়াকুহেইয়ের ভগ্ন-হৃদয় তার মধ্যে আক্রোশের আগুন জ্বালিয়ে নিল এবং হিংসায় অন্ধ হয়ে সে তার নিজের ভাইয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হল, যা তাদামিচির জীবন শেষ করে দিয়ে দুই যমজ ভাইয়ের অমর আত্মাকে আলাদা করে দিল। অমরত্বের সেই ছোট ছোট টুকরো পাঁচজন নতুন রক্ষক সৃষ্টি করল যারা ওই বিভেদপ্রাচীরের রক্ষা করবে এবং তাকে হায়াকুহেইয়ের হাত থেকে বাঁচিয়ে রাখবে যে অশুভ জগতে প্রবেশ করে দৈত্যদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল।
অন্ধকার জগতের আঁধারে আটক হায়াকুহেই সময়ের অন্তরকে